মুরগির চোখে পানি – করাইজা রোগ

তীব্র গরমে অনেক খামারির মুরগির চোখে পানি সমস্যা দেখা দিচ্ছে এবং অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। মুরগি মূলত করাইজা রোগে আক্রান্ত হলে এমনটা হয় এবং এটি একটি মারাত্মক ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ , যা শ্বাসতন্ত্রকে প্রভাবিত করে এবং এটি চোখের নীচের অংশে প্রদাহ , নাক দিয়ে স্রাব এবং হাঁচি দ্বারা প্রকাশ পায়।

মুরগির করাইজা রোগের কারণ

হেমোফিলাস প্যারাগ্যালিনেরাম নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা ইনফেকশাস করাইজা সংক্রমিত হয়। পূর্বে এর নাম ছিল হেমোফিলাস গ্যালেনেরাম (Haemophilus gallinarum)। এই ব্যাকটেরিয়া গ্রাম নেগেটিভ, বাই-পোলার, এরোবিক, নন-স্পোর ফরমিং, ক্যাটালেস নেগেটিভ, নন-মোটাইল ও রডের আকৃতির হয়। এই ব্যাকটেরিয়ার এন্টিজেনিক টাইপ আছে। এই টাইপগুলো হলো A, B ও C । হেমোফিলাস প্যারাগ্যালেনেরাম ব্যাকটেরিয়া তাপ ও যে কোনো জীবাণুনাশক দ্বারা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। পোষকের শরীর ছাড়া ২-৩ দিনের মধ্যে স্বাভাবিক পরিবেশে মারা যায়।

মুরগির করাইজা রোগের লক্ষণ

  • করাইজা রোগে আক্রান্ত মুরগির নাসারন্ধ্র ও সাইনাসে (Sinus) প্রদাহ হয়।
  • প্রদাহের ফলে নাক থেকে প্রথমে পানির ন্যায় তরল পদার্থ নিঃসৃত হয় পরে রক্ত মিশ্রিত শ্লেষ্মা নিঃসৃত হয়।
  • সাইনাস প্রদাহের ফলে মুখ ফুলে যায়। অক্ষি ঝিল্লিতে প্রদাহ হয়, চোখ দিয়ে পানি পড়ে, চোখের পাতা আটকে যায়।
  • শ্বাসতন্ত্র আক্রান্ত হওয়ার পর শ্বাসকষ্ট ও ঘড়ঘড় শব্দ হয়।
  • গলকম্বল বিবর্ণ হয়ে যায় ও পানি জমে।
  • ডিমপাড়া মুরগীর ডিমপাড়ায় শতকরা ১০ থেকে ৪০ ভাগ কমতে পারে।
  • কোনো কোনো সময় রোগাক্রান্ত মোরগ-মুরগীর মুখমন্ডল ও গলকম্বলে পানি জমা থাকবে।

মুরগির করাইজা রোগের চিকিৎসা

আমি আমার দেশি মুরগির খামারে, করাইজা রোগের চিকিৎসার জন্য যে পদ্ধতি অবলম্বন করি তা হলোঃ

  • আক্রান্ত মুরগিকে আলাদা খাচায় নিয়ে রাখি
  • প্রতিদিন পরিষ্কার খাবার ও পানি ব্যবহার
  • রেনামাইসিন ট্যাবলেট ৪ ভাগের ১ ভাগ + ফিলমেট ২০০ ট্যাবলেটের ২ ভাগের ১ ভাগ সরাসরি মুখে খাওয়ায় দিনে ২ বার
  • মুরগির প্রতি চোখে সিভোডেক্স ভেট ১ ফোঁটা করে দিনে ২ বার প্রয়োগ
  • আপনাদের সুবিধার্থে ভিডিওতে দেখানো হলো, কিভাবে মুরগির ঔষধ খাওয়ানো হচ্ছে

মুরগির করাইজা রোগের প্রতিরোধ

  • অল ইন অল আউট নিয়ম মেনে চলতে হবে।
  • খামারের জৈব নিরাপত্তা কঠোরভাবে পালন করতে হবে।
  • ইনফেকশাস করাইজা রোগ ছোঁয়াচে সেহেতু সুস্থ মুরগিকে রোগাক্রান্ত মুরগি এবং বাহক মুরগি থেকে আলাদা করে ফেলতে হবে।
  • মুরগিকে পরিষ্কার খাদ্য ও পানি সরবরাহ করতে হবে।
  • আক্রান্ত খামার কয়েকদিন পরিত্যক্ত রাখতে হবে। পরে জীবাণুনাশক স্প্রে করে নতুন মুরগির বাচ্চাকে প্রবেশ করাতে হবে।
  • মুরগির ঘর পরিষ্কার রাখতে হবে এবং খামারে কার্যকর জীবাণুনাশক স্প্রে করতে হবে।

মন্তব্য করুন